ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম। নতুন পাসপোর্ট করার পদ্ধতি

আপনি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে নিজেই ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। ই-পাসপোর্টের আবেদন করার নিয়ম এবং কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা জানুন।

এই ব্লগে অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু করেছে।

আপনার যদি মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার থাকে, তাহলে আপনি কোনো দালালের সাহায্য ছাড়াই অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই ব্লগে আমি আপনাকে ই-পাসপোর্ট অনলাইন ফর্ম (Bangladesh Passport Online Form) কিভাবে পূরণ করতে হবে তার বিস্তারিত প্রক্রিয়া দেখাব।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

একটি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সবচেয়ে সুবিধাজনক পদক্ষেপ হল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুলিকে সত্যায়িত করতে হবে না। আপনি খুব কম ডকুমেন্টে দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারেন। বিস্তারিত জেনে নিন- পাসপোর্ট পেতে কী কী প্রয়োজন।

ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো হল :
  • অনলাইন আবেদন Summery;
  • অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফর্ম;
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি 20 বছরের কম বয়সী এবং NID না থাকে);
  • ঠিকানা প্রমাণপত্র/ ইউটিলিটি বিলের কপি (যদি প্রযোজ্য হয়);
  • পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের ফটোকপি (রিনিউয়ের জন্য);
  • পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (সন্তানের ক্ষেত্রে);
  • পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে - যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক, আইনজীবী, পেশাগত সার্টিফিকেট বা চাকরির পরিচয়পত্রের ফটোকপি;
  • নাগরিক সনদ/চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়)।

ই পাসপোর্ট করার নিয়ম

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে যান। তারপর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করুন। আবেদনপত্রে, আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড অনুযায়ী সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য এবং পিতামাতার তথ্য লিখুন। তারপর পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিন।

আবেদনকারীর সমস্ত তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদপত্র অনুসারে পূরণ করতে হবে। অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় সঠিক নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে ভুলবেন না। আবেদনে ভুল করলে পরবর্তীতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।

ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে www.epassport.gov.bd এ যান এবং আবেদন অনলাইন মেনুতে ক্লিক করুন। তারপর আপনার আঞ্চলিক অফিস এবং থানা নির্বাচন করুন। সম্পূর্ণ ইমেল ভেরিফিকেশন এবং ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান. আপনার ঠিকানা এবং পিতামাতার পরিচয় এবং জরুরী যোগাযোগের তথ্য প্রদান করুন। সবশেষে পাসপোর্টের ধরন এবং ডেলিভারি সিলেক্ট করে আবেদন জমা দিন এবং প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করুন।

ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে আপনার জেলায় ই-পাসপোর্ট সেবা চালু আছে কিনা।

ধাপ ১: আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন করুন

ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য E-passport Applications এই লিঙ্কে যান। নিচের ছবির মত একটি পেজ দেখতে পাবেন।

ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম। নতুন পাসপোর্ট করার পদ্ধতি-e-passport-online-application

এখান থেকে Directly to online Application অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের ছবির মত পেজ আসবে। এখানে আপনার জেলা এবং থানার নাম নির্বাচন করুন।

ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম। নতুন পাসপোর্ট করার পদ্ধতি-e-passport-online-application
পরবর্তীতে আপনাকে ইমেল ঠিকানা যাচাই করতে হবে। এখানে দেওয়া ইমেল এড্রেস পাসওয়ার্ড আপনাকে অবশ্যই জানা থাকতে হবে, পরে উক্ত ইমেইল এড্রেস এবং পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে।

আপনার ইমেইলের পাসওয়ার্ড মনে না থাকলে, অন্য ইমেল প্রদান করুন বা ফরগেট করে একটি নতুন পাসওয়ার্ড সেট আপ করুন। আপনার ইমেল এড্রেস লিখুন এবং নিচে টিক দিন I am not a robot এবং Continue বাটনে ক্লিক করুন।

ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম। নতুন পাসপোর্ট করার পদ্ধতি-e-passport-online-application

ধাপ ২: ইমেইল ভেরিফিকেশন করুন

এর পরে, পাসপোর্ট ওয়েবসাইট থেকে আপনার প্রদত্ত ইমেল এড্রেসে একটি যাচাইকরণ লিঙ্ক মেইলে পাঠানো হবে। লিঙ্কে ক্লিক করে ইমেল ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ করুন।

ধাপ ৩: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করুন

ইমেইল ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে আবার পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে লগইন করুন। এখন পাসপোর্টের ধরন হিসাবে নতুন পাসপোর্টের জন্য Apply for a New Passport বোতামে ক্লিক করুন এবং সাধারণ এবং সরকারী আদেশ বা NOC এর মাধ্যমে পাসপোর্ট Official সিলেক্ট করুন।

how-to-apply-for-e-passport-ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

এখানে ইংরেজিতে আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।

apply-for-e-passport-ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

ইমেইল ভেরিফিকেশনের পর আবার পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে লগইন করুন।

এখানে আপনার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য লিখুন এবং Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন কোনটি প্রয়োজন?


আপনি যদি 18 বছরের কম বয়সী হন এবং এখনও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি না করে থাকেন তবে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে একটি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।

আপনার বয়স 18-20 বছরের মধ্যে হলে আপনি জন্ম নিবন্ধন (BRC) বা জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।

আপনার বয়স 20 বছরের বেশি হলে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। আপনি যদি সবেমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করে থাকেন এবং এখনও আপনার স্মার্ট কার্ড না পান তবে আপনি ইন্টারনেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারেন।


ID Documents: আইডি ডকুমেন্টস ধাপে আপনাকে আপনার আগের পাসপোর্ট বা অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট আছে কিনা এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে।

apply-for-e-passport-ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
আপনার যদি আগের পাসপোর্ট থাকে তাহলে Yes দিন এবং না দিলে No, I don’t have any previous/ handwritten passport দিন।


পাসপোর্ট সংশোধন বা রিনিউ আবেদন: যারা পাসপোর্ট সংশোধন বা নরিনিউ এর জন্য আবেদন করতে চান তাদের অবশ্যই পূর্বের পাসপোর্টের তথ্য Yes দিয়ে দিতে হবে।

Address: আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে প্রদান করুন। যদি আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হয় তাহলে নিচের বক্সে টিক দিন।

apply-for-e-passport-ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম


Emergency Contact: জরুরী যোগাযোগের জন্য আপনার পরিবারের সদস্যদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর প্রদান করুন যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন বা অন্য কেউ।

Passport Option: আপনার পাসপোর্টের পৃষ্ঠার সংখ্যা এবং মেয়াদ Select করুন।

Delivery Option: এই ধাপ থেকে নির্বাচন করুন Passport Delivery সাধারণ নাকি জরুরি। জরুরি হলে Express এবং সাধারণ হলে Ordinary নির্বাচন করুন।

অবশেষে, উপরে প্রদত্ত সমস্ত তথ্য পুনরায় পরীক্ষা করুন এবং আবেদন জমা দিতে সাবমিট বোতামে ক্লিক করুন।

ই পাসপোর্ট ফি প্রদান ও আবেদন প্রিন্ট

ই-পাসপোর্ট আবেদন সফলভাবে জমা দেওয়ার পর, মুদ্রণের জন্য 2টি পিডিএফ ডাউনলোড করতে হবে।
1) Application Summery,
2) Online Registration 
এই 2টি পিডিএফ কম্পিউটার থেকে ভালো করে প্রিন্ট করে নিন। আপনার যদি কম্পিউটার না থাকে তবে এটিকে আপনার ডিভাইসে পিডিএফ ফাইল হিসাবে সংরক্ষণ করুন এবং তারপরে এটি একটি কম্পিউটার সেবা দোকান থেকে প্রিন্ট করুন৷

এই ডকুমেন্টগুলো পরে প্রয়োজন হবে Application summery টি ১ পৃষ্ঠা ও Online Registration form টি উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করুন।

এখন Application Summery পেইজের প্রিন্ট কপি এবং আপনার NID নিয়ে ব্যাংকে যান। ব্যাংকে আপনার পাসপোর্ট ফি প্রদান করুন। ফি প্রদানের ক্ষেত্রে, Passport Application Summery অনুযায়ী এ চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হবে।

আপনি চাইলে বিকাশ বা যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে A Challan এর মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দিতে পারেন।

ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে

ই-পাসপোর্টের জন্য সর্বনিম্ন 4025 টাকা থেকে সর্বোচ্চ 13,800 টাকা খরচ হবে। এছাড়াও, আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে নিজে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে না পারেন, তাহলে আপনার এলাকার যেকোনো কম্পিউটার সেবার কোন প্রতিষ্ঠানকে এই কাজের জন্য 200-300 টাকা ফি দিতে হতে পারে। পৃষ্ঠার সংখ্যা, মেয়াদ এবং পাসপোর্ট ডেলিভারির পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ফি পরিবর্তিত হতে পারে।

ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন বাতিল করার নিয়ম

ই-পাসপোর্টের আবেদন বাতিলের জন্য আঞ্চলিক জেলা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর অনলাইন বা অফলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার কোনো পদ্ধতি নেই।

 বিস্তারিত জানতে দেখুন - ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম

আপনি যদি পাসপোর্টের তথ্য প্রদানে কোনো ভুল করেন এবং সেই কারণে পাসপোর্টের আবেদন বাতিল করতে চান, তাহলে আপনি পাসপোর্ট অফিস থেকে এই ভুলগুলি সংশোধন করতে পারেন এবং আবেদনটি বাতিল না করে এনরোলমেন্টে জন্য পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে পারেন। এ বিষয়ে আঞ্চলিক জেলা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের সাথে আলোচনা করুন।

ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম - MRP to E Passport

যদি আপনার আগে এমআরপি পাসপোর্ট থাকে এবং এই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাহলে আপনি এটি রিনিউ করতে পারেন এবং একটি নতুন ই-পাসপোর্ট পেতে পারেন।

এমআরপি পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্ট পেতে আপনাকে রিনিউয়ের জন্য আবেদন না করে সরাসরি ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় আইডি ডকুমেন্ট থেকে শুধুমাত্র আপনার পূর্ববর্তী এমআরপি পাসপোর্ট তথ্য প্রদান করুন।

এমআরপি থেকে ই পাসপোর্টে রিনিউ করার সুবিধা

MRP পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টে নবায়নের প্রধান সুবিধা হল তথ্য পরিবর্তন। এছাড়াও, আপনার পূর্ববর্তী এমআরপি পাসপোর্টের কোনো তথ্যে ভুল থাকলে, আপনি নতুন সঠিক তথ্য সহ আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কিন্তু মনে রাখবেন, পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য আবার পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যেতে আপনার অতিরিক্ত 5/7 দিন এবং ঝামেলা লাগবে, খুব প্রয়োজন না হলে এটি পরিবর্তন করা উচিত নয়।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url